তাসাওউফের ভূমিকা
শরীয়তের যে শাখা অন্তরের আভ্যন্তরীণ আমলের (আমলে বাতেন) সাথে সম্পর্কিত তাকে তাসাওউফ বলা হয়। এবং শরীয়তের যে শাখা বাহ্যিক আমলের(আমলে যাহেরী) সাথে সম্পর্কিত তাকে ফিকহ বলা হয়। তাসাওউফ মূলত চরিত্রের সৌন্দর্যায়ন (তাহযিব আল-আখলাক) নিয়ে কাজ করে যখন তা শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই হয়।আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার সন্তুষ্টি অর্জনের পদ্ধতি হলো শরীয়তের সকল নির্দেশনাকে পরিপূর্ণ ভাবে মান্য করা।
তাসাওউফ হলো ইসলামের রূহ ও পূর্নতার চূড়ান্ত শিখর। এটা মানুষকে আত্মার খারাপ ও অপরিশুদ্ধ গুনাবলী থেকে সংশোধন করে। যেমনঃ
- লিপ্সা
- রাগ
- আক্রোশ
- বিদ্বেষ
- হিংসা
- দুনিয়ার মহাব্বাত
- খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা
- লোভ
- দম্ভ
- অহংকার
- প্রতারণা
- ঔদ্ধত্য
- লৌকিকতা
পাশাপাশি, তাসাওউফ মানুষের অন্তরে সৎ গুনাবলীও পয়দা করে। যেমনঃ
- ভালো কাজ করার ও মন্দ হতে বিরত থাকার প্রবণতা সৃষ্টি করা
- ধৈর্য
- আন্তরিকতা
- কৃতজ্ঞতা
- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার ভয়
- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার জন্য ভালবাসা
- সংযম
- নিষ্ঠা
- সত্যবাদিতা
- গুনাহের ব্যাপারে অনুশোচনা
- একাগ্রতা
- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকা
এই পদ্ধতিতে মানুষের অন্তরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার মহাব্বাত সৃষ্টি হয় এবং এটাই আমাদের জীবনের আসল উদ্দেশ্য! প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাযকিয়ার(অন্তরের পরিশুদ্ধির) এই পথ অবলম্বন করা আবশ্যক যা ব্যতিত কেউ যথাযথ ও পরিপূর্ণ মু’মিন হতে পারবে না।
তাসাওউফের প্রয়োজনীয়তা
হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ. ‘হাকিকত আল-তারিকত’ কিতাবের ভূমিকায় উল্লেখ করেছেনঃ
“বিশ্বাস ও বাহ্যিক আমলের পরিশুদ্ধির পরে প্রত্যেক মুসলমানের উপর তার অন্তরের পরিশুদ্ধি করা ফরজ(আবশ্যক)।অসংখ্য কুরআনের আয়াত এবং অগনিত হাদিস স্পষ্টভাবে এর আবশ্যকতার জানান দিয়েছে।যদিও বেশীরভাগ মানুষ গভীর পান্ডিত্যের অভাবে এই ব্যাপারে অবহেলা করে থাকে কারন তারা নিজেদের খায়েশাতের অনুসরন করে।[….]
যেই ভালো গুন গুলো অর্জন করতে এবং মন্দ গুন গুলো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে এই ব্যাপারে কোন রকম সন্দেহের অবকাশ রয়েছে কী? এটাই মূলত অন্তরের পরিশুদ্ধির প্রকৃত অর্থ। এটাই তাসাওউফের প্রধান উদ্দেশ্য।তাই কোনরকম সন্দেহ ছাড়াই এটা আবশ্যক(ফরজ) এবং প্রতিষ্ঠিত সত্য।”